IQNA

মুসলিম স্পেনে আইনচর্চায় এগিয়ে ছিলেন যে নারী

3:08 - October 31, 2023
সংবাদ: 3474584
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় মুসলিম স্পেন ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রে জ্ঞানীদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। বিশেষত যারা বিচারক, ফতোয়া প্রদানকারী, শিক্ষক, হিসাবরক্ষকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে নিযুক্ত থাকতেন। এসব কাজে ফকিহ বা আইনবিদদের সুযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি।
কেননা সে সময় ফকিহরা আনুষঙ্গিক ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি জাগতিক বিষয়েও পারদর্শী হতেন।
জ্ঞানচর্চা ও কর্মক্ষেত্রের এই বিস্তৃত অঙ্গনে পুরুষের মতো নারীদেরও সমান অংশগ্রহণ ছিল। ফলে মুসলিম স্পেনে ফিকহ বা ইসলামী আইনচর্চায় নারীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। হিজরি তৃতীয় শতকের শেষভাগে এবং চতুর্থ শতকের শুরু ভাগে বেশ কয়েকজন নারী ফিকহশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
 
ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া (রহ.) তাঁদের অন্যতম।
ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া বিন ইউসুফ মাগামি (রহ.)-এর জন্ম মুসলিম স্পেনের রাজধানী কর্ডোভায়। জ্ঞানচর্চায় তাঁর পরিবারের বিশেষ খ্যাতি ও সুনাম ছিল। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ফকিহ ও মুহাদ্দিস ইউসুফ বিন ইয়াহইয়া মাগামি (রহ.)-এর বোন।
 
তৎকালীন যুগে তাঁকে মালেকি মাজহাবের শ্রেষ্ঠ আলেম মনে করা হতো। ধারণা করা হয়, পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং কর্ডোভার বিশিষ্ট আলেমদের কাছ থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন।
ঐতিহাসিকরা ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া (রহ.)-এর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু লেখেননি। তবে তাঁরা এ বিষয়ে একমত যে ফাতেমা মাগামি (রহ.) ৩১৯ হিজরিতে খলিফা নাসির লি-দিনিল্লাহর যুগে কর্ডোভয়া মারা যান এবং তাঁকে কর্ডোভা শহরের বাইরে ‘রাবস’ নামক স্থানে দাফন করা হয়। তাঁর জানাজায় বিপুলসংখ্যক জ্ঞানী, গুণী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে।
 
তাদের মধ্যে ফকিহ মুহাম্মদ বিন আবি জায়েদ (রহ.) এবং মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন আদল (রহ.)-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ আলেমরাও ছিলেন। মুহাম্মদ বিন আবি জায়েদ (রহ.) তাঁর জানাজার নামাজের ইমামতি করেন। যে পরিমাণ মানুষ তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিল আর কোনো নারীর ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। (আলজাজিরা)
‘আল-মারয়াতু ওয়াত-তালিমু ফিল আন্দুলুস’ গ্রন্থকার ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া সম্পর্কে লেখেন, ‘তিনি ধর্মীয় জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। আর অর্জিত জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আজীবন শিক্ষকতা করেন। নারী-পুরুষ সবাই তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত। স্পেনের পুরুষ আলেম ও পণ্ডিতরা নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং তাঁর দ্বারস্থ হতেন।’ (পৃষ্ঠা ১৩৭)
 
ঐতিহাসিক আহমদ বিন ইয়াহইয়া দিব্বি (রহ.) ফাতেমা মাগামি (রহ.)-এর প্রশংসা করে লেখেন, ‘তিনি ছিলেন পুণ্যবান, মর্যাদা, জ্ঞানী, আইনবিদ ও আল্লাহভীরু নারী।’ (বুগয়াতুল মুলতামিস, পৃষ্ঠা ৫৪৭)
 
আল্লামা ইবনে বাশকুল (রহ.) লেখেন, তৎকালীন যুগে কর্ডোভায় অসংখ্য মহীয়সী নারীর জন্ম হয়। তাঁদের ভেতর উজ্জ্বলতম ছিলেন ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া মাগামি (রহ.)। তিনি ফিকহ, তাফসির ও হাদিসশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। এসব বিষয়ে তিনি পাঠদান করতেন। তাঁর জ্ঞানসভায় সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেমরা অংশ নিতেন এবং উপকৃত হতেন। কেননা তাঁর মধ্যে জ্ঞান, আমল, সচ্চরিত্র ও উত্তম আচরণের সমন্বয় ঘটেছিল। সামাজিকতা ও লেনদেনে তিনি সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য অনুসরণীয় ছিলেন। তাঁর মধ্যে কল্যাণের কাজে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল। (আস-সিলাহ : ২/৬৯১)
 
আল্লাহ এই মহীয়সী নারীর কবর শীতল করুন। আমিন।
ট্যাগ্সসমূহ: জ্ঞান
captcha