IQNA

ভারত কেনো বিশ্বে বদনাম কুড়াচ্ছে? কিছু কারণের প্রতি দৃষ্টিপাত

22:52 - April 24, 2024
সংবাদ: 3475365
ইকনা: ভারত এমন একটি ভূমি যেটি অতীতকাল থেকেই তার বৈচিত্র্য এবং সহনশীলতার জন্য পরিচিত এবং অন্যদিকে গত শতাব্দীতে দেশটি একটি ঔপনিবেশিক বিরোধী সমাজ এবং রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বে অনেক সুনাম অর্জন করে।

গত এক দশকে বিশেষ করে গত দুই বছরে বিশ্বের মানুষের কাছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি অনেকটাই কমে গেছে। এটি আরও আশ্চর্যজনক যে এই চিত্রটি বিশ্বের উত্তরাঞ্চলীয় দেশ এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলির মধ্যে সমর্থন কমেছে এবং অ-পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দেশটির সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এখানে আমরা তিনটি কারণ উল্লেখ করতে পারি:

পশ্চিমারা এবং তাদের গণমাধ্যমগুলো ভারতীয় জনগণকে ঘৃণা করে:

ভারতের বৃহত্তম পাবলিক ব্রডকাস্টিং এজেন্সি  প্রসার ভারতী'র সিইও শশী শেখর ভেম্পতি বলেছেন যে ভারত সব সময় তার দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার মিথ্যা দাবির জবাব দিচ্ছে।

পশ্চিমা মিডিয়া ভারতকে হাতি, সাপের রমণী এবং অতি দরিদ্রের দেশ হিসাবে কল্পনা করে।

ভেম্পতি  বলেন,

পশ্চিমারা বিশ্বে বিশেষ করে চীনসহ বড় বাজারে শ্রোতাদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে ভারতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।

নিউইয়র্কে বসবাসকারী সাংবাদিক এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শারভান ভাটও বলেছেন,

সংবাদপত্র এবং সংবাদ ব্যবসায় আপনাকে একটি গল্প বিক্রি করতে হবে। আর  একটি গল্প বিক্রি করতে হলে আপনাকে এর পিছনে এক ব্যাখ্যাও বিক্রি করতে হবে।" এদিকে, ভারতীয়রা সব সময় পাশ্চাত্যকে সভ্য মানুষসহ একটি সুন্দর ভূমি হিসাবে কল্পনা করে।

 জার্মান ম্যাগাজিনের একটি কার্টুন যা ভারতের মানুষকে উপহাস করছে

ভারতে চরমপন্থা 

ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)'র ভারতীয় রাজনৈতিক দৃশ্যে উত্থান দেশটিতে নতুন সংঘাত সৃষ্টি করেছে। বিজেপি এমন একটি দল যেটি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করে। নয়াদিল্লির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস)-এর সাম্প্রতিক জরিপ দেখায় যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতিগুলি দেশে ধর্মীয় বিভাজন আরও গভীর করেছে৷

ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে এই ধর্মীয় বিভাজন বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিয়ে ক্ষমতা দখল করে এবং আরএসএস এবং শিবসেনার মতো হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে উস্কে দিয়ে জনগণের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করেছিল যাদের গ্রামে এবং ছোট শহরগুলোতে প্রচুর প্রভাব রয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের বিভিন্ন শহরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে।

একটি কার্টুনে দেখানো হয়েছে যে পশ্চিমারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার চীনা প্রতিবেশীর সামনে দাঁড় করাতে প্রতারণা করছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে মসজিদ ধ্বংস ও জ্বালিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন সীমিত করা, মুসলিম অভিবাসীদের বসবাসের অনুমতি প্রদান নিষিদ্ধ করা, কাশ্মীর অঞ্চলের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু চরমপন্থীদের সহিংস আক্রমণের মুখে নীরব থাকা অন্যতম। এসব সমস্যার কারণে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে এবং বিশ্ব স্তরে এবং অন্যান্য দেশের ধর্মীয় ও ইসলামিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

ভারতের ঔপনিবেশিক বিরোধী পরিচয় ত্যাগ করে ঔপনিবেশীবাদ ও কুখ্যাত ধারার দিকে অগ্রসর হওয়া

আরেকটি সমস্যা হলো ভারতের ঔপনিবেশিক বিরোধী ধারা প্রতি প্রতি মনোযোগের অভাব। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে ভারত পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং এই প্রেক্ষাপটে দেশটি ইহুদিবাদী ইসরাইলে পররাষ্ট্রনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা বিশ্বকে অবাক করেছ। যেমন ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের নীতিগুলোর পরিবর্তন বিরোধপূর্ণ ছিল এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে দেশটি দখলদার ইসরাইলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নয়াদিল্লী ইসরাইলকে কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমর্থন দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় তারা এর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতাও যোগ করেছে।

ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এতটাই এগিয়ে গিয়েছিল যে নরেন্দ্র মোদিই প্রথম বিশ্ব নেতা যিনি গাজায় প্রতিরোধকামীদের আল-আকসা তুফান অভিযানের নিন্দা জানিয়েছিলেন। এছাড়াও, ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থন বজায় রেখে ভারত গত অক্টোবরের ২৭ তারিখে জাতিসংঘে গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার অনুরোধের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে অস্বীকার করে।#

পার্সটুডে

captcha