IQNA

নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার গায়েবি লঙ্গরখানা

18:56 - September 09, 2022
সংবাদ: 3472428
তেহরান (ইকনা): ভারতের দিল্লিতে সমাধিত আছেন বিশ্বের বিখ্যাত সুফি সাধকদের অন্যতম নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.)। যা জনসাধারণের কাছে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ বলে পরিচিত। প্রতি সপ্তাহে সেখানে হাজার হাজার মুসলিমসহ হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও পরিদর্শনে আসে। সেখানে আগতদের জন্য খোলা আছে উন্মুক্ত লঙ্গরখানা।
সুলতানুল মাশায়েখের দরবারে জনতার ঢল পূর্বযুগ থেকেই ছিল। হজরত খাজা নাসিরুদ্দিন চেরাগে দিল্লি (রহ.) বলেন, বিজয় অভিযানের অবস্থা ও নমুনা এমন ছিল যে ধন-দৌলতের সমুদ্রে দরজার সামনে ঢেউ খেলত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই নয়; বরং এশা পর্যন্ত লোকজনের আসার বিরাম ছিল না। কিন্তু আনয়নকারীর চেয়ে গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। [সিরাজুল মাজালিস, {খায়রুল মাজালিসের অনুবাদ} হজরত খাজা নাসিরুদ্দিন চেরাগে দিল্লি (রহ.)-এর মালফুজাত]
 
তিনি নিজে সারা বছর রোজা রাখতেন। কিন্তু তাঁর শাহি দস্তরখানা দুবেলা বিছানো হতো এবং তাতে বিভিন্ন প্রকারের প্রচুর খাদ্যদ্রব্য রাখা হতো। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, স্থানীয়-মুসাফির, নেককার-বদকার কারো বাছবিচার ছিল না। সর্বস্তরের মানুষ এক জায়গায় বসে একসঙ্গে খাবার খেত। নিয়ে যাওয়ারও অনুমতি ছিল। কেউ কেউ খেত এবং বেঁধেও নিয়ে যেত। এই শাহি দস্তরখানের বৈশিষ্ট্য ছিল অনন্য। এই দস্তরখানে বসে শত শত হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের সেসব খাবার খাওয়ার সৌভাগ্য হতো, যারা সেগুলোর নামও শোনেনি। শাহি দরবারে বড় বড় আমির-উমারা এবং সাম্রাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গেরও ওই দস্তরখানে শরিক হওয়ার আগ্রহ প্রবল ছিল।
 
কারণ নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.)-এর শাহি দস্তরখানে মহান আল্লাহর আলাদ রহমত ছিল। যা সে যুগের রাজা-বাদশাহরাও উপলব্ধি করতে পারত। একবার সুলতান কুতুবুদ্দিনকে কোনো হিংসুটে বলল যে শায়খ আমাদের হাদিয়া নাজরানা গ্রহণ করেন না, অথচ আমির উমরা ও সরদারদের আনীত নজরানা কবুল করেন। সুলতান কুতুবুদ্দিন এর সত্যতা অবহিত হওয়ার পর নির্দেশ পাঠান যে কোনো আমির অথবা সরদার শায়খ (রহ.)-এর ওখানে যাবে না। দেখি, তিনি এত পরিমাণ লোকের দাওয়াত কোথা থেকে করেন। অধিকন্তু তিনি গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন। তাদের ওপর দায়িত্ব চাপানো হয়েছিল যেন তারা কোনো আমির খাজা (রহ.)-এর দরবারে গেলে তা লক্ষ্য রাখে এবং যথাসময়ে গিয়ে বাদশাহকে অবহিত করে। হজরত শায়খ (রহ.) এ কথা শোনার পর বলেন, আজ থেকে খাবার বেশি করে পাক করা হোক। বেশ কিছুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর একদিন বাদশাহ লোকজনকে জিজ্ঞেস করেন, শায়খের খানকাহর অবস্থা কী? তারা বলল যে আগে যে পরিমাণ পাক করা হতো বর্তমানে তার দ্বিগুণ পাক করা হয়ে থাকে। এ কথা শোনার পর বাদশাহ অত্যন্ত লজ্জিত হন এবং বলেন, আমিই ভুলে ছিলাম। তাঁর কারবারই তো গায়েবি জগতের সঙ্গে। (সুলতানুল মাশায়েখ হজরত খাজা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (র.)  [আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর ‘তারিখে দাওয়াত ও আজিমত’ গ্রন্থের একাংশের অনুবাদ] (পৃ. ৭৬)
captcha