মোগল ও সুলতানি আমলের অন্য মসজিদের মতো এই মসজিদও উঁচু চত্বরের ওপর নির্মিত। সুরা মসজিদ এক গম্বুজবিশিষ্ট ও বর্গাকার। এর সম্মুখভাগে একটি বারান্দা আছে। পূর্ব পাশ থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি চত্বর পর্যন্ত উঠে গেছে। উন্মুক্ত চত্বরটির চারপাশ পুরু প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। বর্তমানে স্থাপনাটির ভিত পর্যন্তই প্রাচীর আছে। তবে পূর্বদিকের প্রবেশদ্বারের উচ্চতা থেকে অনুমিত হয়, মসজিদটিকে বাইরের শব্দ ও কোলাহল থেকে মুক্ত রাখতে বেষ্টন-প্রাচীরগুলোও যথেষ্ট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছিল, যা সাধারণত দেখা যায় না।
মসজিদে একটি বর্গাকার প্রার্থনা কক্ষ আছে, যার প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ৪.৯ মিটার। সব কোণে আছে অষ্টভুজ স্তম্ভ, মোট স্তম্ভের সংখ্যা ছয়। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দিকে আছে তিনটি কারুকাজখচিত মিহরাব। প্রার্থনা কক্ষটি একটি গোলার্ধ আকৃতির গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত।
মসজিদের বারান্দায় তিনটি গম্বুজ। এই গম্বুজগুলো পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতিতে স্থাপিত। ছোট সোনা মসজিদের সঙ্গে এই গম্বুজগুলোর ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য আছে। মসজিদের বহিরাংশে গোলাপ ও অন্যান্য লতাপাতার নকশাখচিত পোড়ামাটির কারুকাজ আছে। জ্যামিতিক আকৃতির কিছু নকশাও দেখতে পাওয়া যায়। ভেতরের মিহরাবগুলো ছিল সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। মধ্যবর্তী প্রধান মিহরাবে সূক্ষ্ম কারুকাজ দৃষ্টিগোচর হয়। নির্মাণশৈলীর ভিত্তিতে আহমদ হাসান দানী মসজিদটিকে হোসেন শাহী আমলের বলে মনে করেন। সম্প্রতি সুরা মসজিদ থেকে কয়েক মাইল দূরে চম্পাতলী নামক স্থানে আলাউদ্দীন হোসেন শাহের আমলের একটি শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাতে ৯১০ হিজরি মোতাবেক ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দ উল্লেখ আছে। এতে একটি মসজিদ নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই লিপিটির সঙ্গে সুরা মসজিদের সম্পর্ক আছে, তাহলে মসজিদটির নির্মাণকাল ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দ বলে ধারণা করা যায়। অন্যদিকে মসজিদ নিয়ে নানা উপাখ্যান ছড়িয়ে আছে স্থানীয়দের মধ্যে। যেমন এটা জিনদের তৈরি বলে এর নাম সুরা মসজিদ। কেউ বলেন, এর নাম ছিল সুজা মসজিদ। কেননা শাহ সুজা মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
প্রাচীন এই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসে। স্থানীয়দের আশা, মসজিদটি সংস্কার ও পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে পর্যটন খাতে মসজিদটি বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।
বাংলাপিডিয়া অবলম্বনে