IQNA

কুরআন তিলাওয়াত একটি অনন্য শিল্প/১৩

ওস্তাদ শাহাতের তিলাওয়াতের সুরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

0:05 - December 11, 2022
সংবাদ: 3472969
তেহরান (ইকনা): মরহুম অধ্যাপক শাহাত মোহাম্মদ আনোয়ারের তিলাওয়াতের সূরা হোজন অর্থাৎ দুঃখের সূর। প্রসঙ্গক্রমে, রেওয়ায়েতে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা দুঃখের সাথে কুরআন তিলাওয়াত কর।

 
মরহুম ওস্তাদ শাহাত মোহাম্মদ আনোয়ারের (১৯৫০-২০০৮) তিলাওয়াতের সূর অতি মসৃণ সুরে ছিল, যা তাকে অন্যান্য মিশরীয় ক্বারিদের থেকে ব্যাপকভাবে আলাদা করেছে। মেনশাভির শৈলীর তুলনায় শাহাতের শৈলীর একটি ভিন্ন পিচ রয়েছে এবং যদি কেউ এই শৈলীটি অনুকরণ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই তার কণ্ঠের মান অনেক উচ্চ শক্তি সম্পন্ন হতে হবে।
শাহাতের অনন্য শৈলী সত্যিই তার তিলাওয়াতের আধ্যাত্মিকতা যোগ করে। ক্বারিদের মধ্যে আমরা এমন লোককে চিনি যারা শাহাত আনোয়ারের চেয়ে বেশি সুরেলা ছিলেন, তবে শাহাতের তিলাওয়াত তার চরিত্রের ভঙ্গি ও ওজন এবং তার তিলাওয়াতে দুঃখের সুরের কারণে আজও তার শৈলী অনেকে অনুকরণ করছে।
শাহাতের তিলাওয়াত সুখের নয়, দুঃখের
সৌন্দর্য সম্পর্কে মানুষের অনুভব এবং উপলব্ধি আলাদা। মানুষের রুচি নির্ভর করে ভূগোল, সংস্কৃতি, অভ্যাস এবং মানুষের চেতনার মতো বিষয়ের ওপর; সেটা স্বয়ং ক্বারি অথবা শ্রোতাদের উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শাহাত তিলাওতের সুর সত্যিই দুঃখ জনিত সুর। দুঃখের তিলাওয়াতের একটি লোকজ সূত্র আছে। যদি আপনি একটি তেলাওয়াত শুনার পর আপনার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়, সেই তিলাওয়াত দুঃখজনক। আর যাইহোক, হাদিসে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে দুঃখের সাথে কুরআন পড়ার। দুঃখ ছাড়া পড়ার কোন মানে নেই। অবশ্যই, রহমত ও নেয়ামতের আয়াত শ্রোতাদের মধ্যে আনন্দ এবং আশা তৈরি করবে, তবে এই একই আনন্দ এবং আশা দুঃখের সাথেও উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত।
স্বর পরিবর্তনের কারণগুলির মধ্যে একটি হল মোড (গতিবিদ্যা)। আপনি যদি মেজাজ এবং আবেগ ছাড়া শব্দ বাজান তবে এটি একটি নিয়মিত গাড়ির শব্দের মতো আবেগহীন হবে। কিছু মোড অভ্যন্তরীণ; যেমন ভয়, ক্রোধ, দুঃখ, আশা, সুখ, মহিমা, দয়া ইত্যাদির অবস্থা, যার অর্থ বোঝাতে ওস্তাদ মোস্তফা ইসমাইল এই কৌশলটি অনেক বেশি ব্যবহার করেন।
কিছু মোড বাহ্যিক, যেমন: একটি শব্দে হঠাৎ তীব্রতা এবং উচ্চারণ, প্রথমে শক্তিশালী এবং অবিলম্বে শব্দকে নরম করে, ধীরে ধীরে শব্দগুলিকে শক্তিশালী করে, ধীরে ধীরে শব্দগুলিকে নরম করে এবং... ওস্তাদ শাশাই বিশেষভাবে অর্থ প্ররোচিত করার জন্য এই কৌশলটি ব্যবহার করেন। ওস্তাদ শাহাত, সুর পরিবর্তন করা এবং অর্থ প্ররোচিত করার জন্য বিভিন্ন সুরেলা বাক্য ব্যবহার করার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে মোডগুলিও ব্যবহার করেন। 
১৩৬৯ সালে ইরানের এরশাদ হোসাইনিয়াতে তিনি যে সূরা ত্বহা পাঠ করেছিলেন, ওস্তাদ শাহাত ৪৫ এবং ৪৬ নম্বর আয়াতে তিলাওয়াত করেছিলেন, মূসা এবং হারুন (আঃ) মহান আল্লাহর দরবারে প্রস্তাব দেন যে "তারা ভয় পায় যে ফেরাউন তাদের আক্রমণ করবে", একটি সুর, মোড এবং শব্দের (নাখাফ) উপর জোর দিয়ে ভয়ের অনুভূতি এবং পরের আয়াতে যখন আল্লাহ বলেন: "ভয় পেও না আমি তোমার সাথে আছি", তিনি তার সুরে আশা এবং উত্সাহের অনুভূতি ব্যবহার করেন।
এছাড়াও, সূরা আল-ইমরানের তিলাওয়াতের উজ্জ্বল অংশে, ৩৬ ও ৩৭  নম্বর আয়াতে তিনি সবচেয়ে উজ্জ্বল তিলাওয়াত এবং মোড সম্পাদন করেন। এই তিলাওয়াতে দেখা যায় যে, তিনি হযরত মরিয়ামের (আ.)এর অনুভূতিকে কেন্দ্র করে তিলাওয়াত করেছেন।
 
সংশ্লিষ্ট খবর
captcha