IQNA

মুহম্মদ মুহসিন;

বীর যোদ্ধা তিতুমীর ।। পর্ব-১

1:31 - September 20, 2020
সংবাদ: 2611499
তেহরান (ইকনা): ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ কলকাতায় গিয়েছিলাম এক সপ্তাহের জন্য। গিয়ে দেখলাম আমার যা কাজ তাতে পুরো এক সপ্তাহ খরচের সুযোগ কম। তাই ভাবলাম কলকাতার ধারেকাছে দু’একটি জায়গায় একটু হাঁটাহাঁটি করে আসা যায় কিনা, যাতে এই পা-দু’খানার উপরে আরো একটু মাহাত্ম্য যোগ করে এক সময় নাতি নাতনিদের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, ‘দেখ দাদু, এই ঠ্যাঙের ঠাটও এক সময় কম ছিল না, অমুক- অমুক- অমুক জায়গার পথের ও ধূলির গল্প এই পায়ে সযত্নে সঞ্চিত আছে- দেখে রাখো- আমার মরার পরে প্রয়োজনে এ গল্প তুমি আবার চালাতে পারবে।’

বীর যোদ্ধা তিতুমীর ।। পর্ব-১এই ভাবনা থেকেই মাথায় ঢুকলো স্থান নির্বাচনের প্রশ্ন। সে প্রশ্ন করলাম অনেকের কাছে। নামও আসলো অনেক স্থানের। সে-সবেরই এক সারি নাম ছিল নারিকেলবাড়িয়া-হায়দারপুর-তিতুমীরের জন্মভিটা ইত্যাদি। এই নাম-সারি মনে ধরলো। নাম তো মনে ধরেছে, এবার পথের খোঁজ মাথায় ঢুকানো দরকার। যে নাম দিলো সে-ও পথের খোঁজ দিতে পারলো না ভালো। আমতা আমতা করে যা বললো তার উপরে আস্থা আনতে পারলাম না পুরোপুরি। ফলে পথ চাইলাম আরো অনেকের কাছে। সে চাওয়ায় বিপত্তিই যেন বেড়ে উঠলো। কারণ রেসপন্সে মনে হচ্ছিলো দশজনে একজনের অবস্থা এরকম যে, এই স্থানসমূহ দূরে থাক তিতুমীর বলতে কোনো মস্ত ব্যক্তি ছিলেন এই পশ্চিমবঙ্গে এমন কথাইতো কখনো শোনেনি। আমার ভিতরেও তখন একটু একটু করে যেন সন্দেহ উঁকি দিতে শুরু করলো, ‘তিতুমীর, হায়দারপুর, নারিকেলবাড়িয়া, বাঁশের কেল্লা এসব সত্যিকারে পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিষয় তো? নাকি আবার পূর্ববঙ্গের?’ সন্দেহটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত দানা বাঁধতে পারলো না। যাঁর কারণে সন্দেহটির দানা বাঁধা সম্ভব হলো না তিনি কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন। তিনি বলে দিলেন রাস্তা। আমি সোদপুর থাকি বলে প্রথমে দমদম যেতে হবে। সেখান থেকে বনগাঁ লোকালে মছলন্দপুর। মছলন্দপুর থেকে ম্যাজিক গাড়িতে রামচন্দ্রপুর। রামচন্দ্রপুর থেকে সোজা নারিকেলবাড়িয়া তথা ইংরেজবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে ইতিহাসের প্রথম দুর্গ- বাঁশের কেল্লা।

১৬ মার্চ সাত সকালে উঠে রওয়ানা হলাম ড. আমজাদ হোসেনের নির্দেশিত পথে। দমদম থেকে বনগাঁ লোকালে উঠেই সিট পেলাম। ভাবলাম সিট যেহেতু পেয়েছি মাথাটা পিছনে ঠেস দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাবে। কলকাতায় কোনো লোকাল ট্রেনে উঠে এর আগে কখনো সিট পাইনি বলেই সিট পেয়ে ভাবনাটা আনন্দের সাথে অতখানি বেড়ে গিয়েছিল। যাত্রী যদি সিট পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে কলকাতার লোকাল ট্রেনের হাজার হাজার হকারদের রুজির কী হবে? সুতরাং তাদের রুজির স্বার্থে হোক কিংবা আমার অনভ্যস্ততার কারণেই হোক জোড়া চোখ খোলা রেখেই বসে থাকলাম। ঘণ্টা দেড়েক যেতে বোধ হয় এসে পড়লাম মছলন্দপুর।

এবার ম্যাজিক গাড়ি। আমাদের পূর্ববঙ্গের নারীপুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে যথারীতি লাজুক চোখগুলো কলকাতার লোকাল ট্রেনগুলোতে অনেক ম্যাজিক-ভেলকি দেখে শুরুটায় এমনিতেই থ’বনে থাকে। এরপরে আবার কী গাড়ির কী ম্যাজিক দেখতে হবে এ নিয়ে আগের দিন ড. আমজাদের মুখে ম্যাজিক গাড়ির নাম শোনার পর থেকেই একটা হাবাসুলভ কৌতূহল আমার মধ্যে কাজ করছিল। এবার মছলন্দপুর নেমে মনে হলো ভিতরে সেই কৌতূহল ক্লাইম্যাক্স বিন্দুতে পৌঁছার তাড়নায় মোটে তর সইতে পারছে না। আর সে কারণেই বোধ হয় সকালের নাস্তাটাস্তা করার কথা মনেই পড়লো না ম্যাজিক গাড়ি দেখার ছটফট বাসনা-বিলাসে। অনেক মানুষের নির্দেশনায় অল্পদূর হেঁটেই পেলাম রামচন্দ্রপুরের ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড। ম্যাজিক গাড়ি মানে হলো মাইক্রোবাসের চেয়ে একটু ছোট কিন্তু তিন চাকার মাহিন্দ্র গাড়ির চেয়ে একটু বড় এক ধরনের চার চাকার গাড়ি। গাড়িতে উঠে মনে হলো এ গাড়িকে ম্যাজিক গাড়ি বলার একটাই কারণ হতে পারে, আর তা হলো এত ছোট গাড়িতে এত বেশি মানুষ বসাতে পারার ম্যাজিক সম্ভবত ভারতবর্ষের আর কোনো গাড়ির জানা নেই।

সেই ম্যাজিক গাড়ির ম্যাজিকের সাহায্যে পুচকে বাঙালি দেহখানাকে ডানে-বাঁয়ে উপরে নিচে আরো অনেক কেটে-ছেঁটে সাইজ করে বসলাম রামচন্দ্রপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যেতেই পাশের যাত্রীর কাছে জানতে চাইলাম তিনি অধিকদূর যাবেন কিনা। জানা গেল তিনিও রামচন্দ্রপুরই যাবেন। শুনে আমার চোখেমুখে পুরো মিস্টার বিনের আনন্দের আলো ঠিকরে উঠলো। যাহ্ শালা, আর বোকা বোকা চেহারা নিয়ে কাউকে জিগ্যেস করে জ্বালিয়ে মারতে হবে না- ‘দাদা, রামচন্দ্রপুর আর কয় স্টপেজ পরে?’  চলবে.....
সূত্র: banglatribune

captcha